Friday, December 5, 2025
HomeScrollAajke | এসআইআর-এর ভূত চেপেছে শুভেন্দু অধিকারীর ঘাড়ে
Aajke

Aajke | এসআইআর-এর ভূত চেপেছে শুভেন্দু অধিকারীর ঘাড়ে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখরেখে যে রোহিঙ্গারা ঠাঁই পেয়েছে, তার প্রমাণ কই?

ভূত আছে কী না জানি না, কিন্তু এটা জানি যে, ভূত সুযোগ পেলেই ঘাড়ে চাপে, আর একবার ভূত ঘাড়ে চাপলে তা নামতেই চায় না। ভূতের শ্রেণি, গোত্র আলাদা আলাদা হয় – সোজা ভূত, মোটা ভূত, কালো ভূত, সাদা ভূত; সত্যজিৎ রায় বলে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর আমলে এই এসআইআর-এর ভূত ছিল না। আসলে তাঁর আমলে দুই পাগলা রাজা-মন্ত্রী মোদি-শাহও তো ছিল না, কাজেই এসআইআর থাকবে কেমন করে! আজ সেই ভূত এসে হাজির, আর ভূত থাকলে ঘাড়ে চাপার চেষ্টাও থাকবে। আর এ রাজ্যে অমন পুরুষ্টু ঘাড় আর ক’টা আছে? চেপেছে শান্তিকুঞ্জের বড়খোকার ঘাড়ে। চাপা ইস্তক ওনার চোখ আরও গোল গোল, আরও বড়বড় ভাঁটার মতো হয়েছে, তিনি একটা কথা বলতে গিয়ে ঘাড়টা হাতির কানের চেয়েও দ্রুত গতিতে নাড়াচ্ছেন, আর কখন যে কী বলছেন, তার ট্রাক রাখতে দুঁদে সাংবাদিকদের ঘাম ছুটে যাচ্ছে। ধরুন এসআইআর এল বঙ্গে, ইন ফ্যাক্ট তারও আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন “নহিঁ চলেগা নহিঁ চলেগা”, বাঙালি উত্তেজিত হলে হিন্দি বলে থাকে। সে কথার জবাবে হাঁক পেড়েছিলেন শুভেন্দু, “এসআইআর করে ছাড়ব, আর কোনও জারিজুরি খাটবে না, ওই দেড় কোটি রোহিঙ্গা আর ঘুসপেটিয়া ঘ্যাচাং ফু। হুঁ হুঁ বাওয়া এর নাম নির্বাচন কমিশন”। আর এখন বলছেন, “সব হিসেব গুলিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল, সব কিছুর কন্ট্রোল নিয়ে নিয়েছে তৃণমূল”। মধ্যে মাত্র মাস দেড়েকের ফারাক, ঘাড়ে ভূত না চাপলে কি এটা সম্ভব? হ্যাঁ, ভুল শুনলে শুধরে নিন, আমি ঘাড়ে ভূত চাপার কথাই বলছি। সেটাই বিষয় আজকে, এসআইআর-এর ভূত চেপেছে শুভেন্দু অধিকারীর ঘাড়ে।

ভূতই তো এমনিতেই যুক্তি তর্কের উর্ধের এক ধারণা, কাজেই সে ঘাড়ে চাপলে যে সেই যুক্তি তর্ক তো আগেই উবে যাবে। যা পড়ে থাকবে তা হল, অসাড় যুক্তিহীন কিছু চিৎকার, কিছু প্রলাপ। আসুন বুঝে নিই শুভেন্দুবাবুর ঘাড়ে চাপা ভূত কী কী বলিয়ে নিচ্ছে ওনাকে। (১) দেড় কোটি রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে এই বাংলাতে, মমতা ব্যানার্জীর সাহায্যেই তারা এই বাংলায় বসে আমাদের ভাত মারছে। এই যে দেড় কোটি? এই সংখ্যা এল কোথ্বকে? ভারত সরকার বলছে যে কম বেশি ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী আছে, এদের মধ্যে আবার হাজার চার পাঁচের জন্য দিল্লির কাছে শিবিরও বানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার। মানে মোদি-শাহের ব্যবস্থাপনাতে অন্তত হাজার চার পাঁচ রোহিঙ্গা যে রোজ খাওয়া দাওয়া করছে, সে তথ্য আছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জীর দেখরেখে রোহিঙ্গারা ঠাঁই পেয়েছে তার প্রমাণ কই? আসতেই পারে এই এসআইআর-এর ফাইনাল তালিকা বের হলে – এমনটা যারা ভাবছেন তাঁদের বলি, খুঁজে পেতে ২৫ জন রোহিঙ্গাকেও চিহ্নিত করতে পারবেন না। কারণ তাঁদের বেশিরভাগই ঢুকেছে উত্তরপূর্বাঞ্চলের সীমানা দিয়ে, যা মায়নামারের সঙ্গে লাগানো, এবং তারা অনায়াসে উত্তর পূর্বাঞ্চলেই নিজেদেরকে মিলিয়ে দিতে পারবেন, যা বাংলাতে কঠিন। কিন্তু শুভেন্দুবাবুর ঘোষিত পিতাশ্রী মোদিজি কিন্তু ওই নির্বাচন কমিশনে মাথা সঙ্ঘী জ্ঞানেশকে ঐ উত্তর পূর্বাঞ্চলে এই এসআইআর করার নির্দেশ দেননি। আবার ধরুন ঐ ঘাড়ে চাপা ভূতের চাপেই শুভেন্দুবাবু এক আজগুবি তথ্য এনে হাজির করলেন, সেই তথ্য হাজির করার পরে এমনকি ব্যস্ত সমস্ত অভিনেতা রুদ্রনীল সমেত বিজেপির নেতা কর্মী এবং তাঁদের পয়সাতে লালিত পালিত ইউটিউবার, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সিয়াররা বলতে শুরু করেছেন, এমন নাকি ১০৮০টা বুথ আছে যেখানে ২০০২-এর পরে আজ অবধি একজনও মারা যাননি, জন্মানওনি, কারণ এক্কেবারে সেদিনে যা ছিল, আজও নাকি সেটাই আছে। এটা নাকি মমতার নির্দেশে বিএলও-রা করেছে। ভূত নেত্য করলে মা কে বউ, বউকে জ্যেঠিমা বলে কেউ কেউ, এ তো দেখি বাপকে বোনপো বানানোর মতো বাজে বকা।

আরও পড়ুন: Aajke | সিঁদুরে মেঘ দেখা প্রাকটিস করুন তৃণমূল নেতারা

(১) নির্বাচন কমিশনের কোন তথ্য বা তালিকা থেকে এই খবর জানা গিয়েছে? (২) নির্বাচন কমিশন কি প্রতিদিনের জমা পড়া তথ্য শুভেন্দু অধিকারীকে আগেভাগে পাঠিয়ে রাখছে? (৩) সেই ১০৮০টা বুথে কি এই ২৩ বছরে তৃণমূলেরও একটা ভোটও বাড়েনি? (৪) ২০০২-এর পরে প্রতিবছর সামারি রিভিশন হবার পরে এই মূহুর্তের ভোটার তালিকা অনুযায়ীই তো এনিউমারেশন ফর্ম বার করা হয়েছে, ২০০২ তো কেবল লিঙ্ক করার জন্য। তার মানে কি ২৩ বছরে কোনও সামারি রিভিশন হয়নি? সেটাও কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করিয়েছেন? আসলে এরকম কিছুই হয়নি, কিন্তু ওই যে ঘাড়ে, হ্যাঁ, ভুল শুনবেন না, ঘাড়ে ভূত চাপলে মানুষজন এরকম উল্টোপাল্টা বকে। উনিও ভাজে বকছেন, ভাট বকছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন যে, রাজ্যের অন্তত ১০৮০টা বুথে নাকি ভোটার সংখ্যা একই আছে, এমন রিপোর্ট দিয়েছে বিএলও, মানে ১০৮০ জন বিএলও কাঠগড়াতে। আমাদের প্রশ্ন হল এই তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? কে দিল? অযথা ভূতে ধরা মানুষের মত তিনি বকবক করছেন কেন?

আমি যখন এই ভূতের তত্ত্ব নিয়ে লেখা শেষ করেছি, তখন সেয়ানা হরিপদ ঢুকল আমার ঘরে। লেখাটা পড়ে আমাকে বলল, কী যে ছাই-পাঁশ লিখছ কে জানে? শুভেন্দুকে ভূতে ধরবে তেমন মানুষ শুভেন্দু নয়। সাত সেয়ানার এক সেয়ানা শুভেন্দু অধিকারী আগে থেকেই এক এসকেপ রুট বার করে রাখল, বলেছিল দেড়-দু’কোটি ঘুসপেটিয়া আর রোহিঙ্গাদের কথা, শেষে দেখা যাবে কিছুই নেই। এটাও নাকি উনি জানেন, আর সেদিনে পাশ কাটানোর জন্যই এখন থেকেই তিনি বলা শুরু করেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই এসআইআর তালিকা যেমন ছিল তেমনই আছে। ওই রাষ্ট্রপতি শাসন না করে এখানে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণ সম্ভব নয়। আর উনি জানেন যে, একবার রাষ্ট্রপতি শাসন হলেই উনি বসবেন মসনদে, অ্যাট লিস্ট সেটাই তো জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এবারে আপনারাই বলুন শুভেন্দু বাবুর ঘাড়ে, হ্যাঁ, ঘাড়ে ভূত চেপেছে? নাকি উনি এখন থেকেই পাশ কাটানোর চেষ্টা করছেন?

দেখুন ভিডিও:

Read More

Latest News